আশির দশক থেকেই বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের টেকনাফে তাদের জন্য আশ্রায়ণ শিবির করা হলেও পরে তারা চট্টগ্রাম, বান্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বাংলাদেশই বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন অনেক রোহিঙ্গা।
এর মধ্যে টেকনাফ জাদিমুড়া ধান রোহিঙ্গা আজিজুর রহমান সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে হোটেল বয়, ধান কাটার কাজ, রিক্সা ও গাড়ি চালানোসহ খুব সহজে নানান ধরণের শ্রম দিয়ে জীবন যাপন করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিক্সা চালিয়ে কম টাকা আয় করায় পরিবার নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হয় তাদের। কিন্তু বাংলাদেশে নিরাপদ ও শান্তিতে থাকতে পারেন তারা।
এদিকে স্থানীয় অনেকে মনে করেন, রোহিঙ্গারা কম দামে বা সস্তায় শ্রম বিক্রি করে, সে কারণে তাদের কাজ পেতে সমস্যা হয় না।
টেকনাফ বাসস্টেশনে রাস্তায় দেখা হয় রিক্সা চালক আবদুস সালামের সাথে। বয়স ষাটের ঘরে এসেছে। পাঁচ বছর আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্য রোহিঙ্গাদের সাথে দল বেঁধে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে টেকনাফে এসে উঠেছিলেন। সেই থেকে রিক্সা চালিয়ে চলছে তার জীবন।
তিনি বলেন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ সাতজনের সংসার আমার আয়ের উপরই চলে। রিক্সা চালিয়ে আমি মালিককে দেয়ার পর যা থাকে, সেটা দিয়েই আমার সংসার চালাতে হয়। মিয়ানমারের নির্যাতনের জ্বালায় এখানে আসি। এখানে রিক্সা চালালে কেউ বাধা দেয় না।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে আমার জায়গা-জমি সব কেড়ে নিয়েছে। সেখানে জীবন চালানোর মতো কিছু ছিল না। তাই নিরাপত্তার জন্য এখানে এসে দু:খ কষ্টে চললেও পরিবার নিয়ে অন্তত রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।
হ্নীলার ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, শিবির কেন্দ্রিক এলাকাগুলোর বাইরে বেশির ভাগ টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে কাজ চালায়। কম দামের এই শ্রমের কদরও রয়েছে। এমনকি “পুরুষরা যেমন দিনমজুরের কাজ করে। শিশুরাও হোটেল বয়সহ বিভিন্ন কাজ করে। রোহিঙ্গা নারীরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি গৃহাস্থলীর বা গৃহকর্মীর কাজ করে।
সংশ্লিষ্ট দফতরের তথ্য মতে, টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যা¤েপ সরকারি তালিকাভুক্ত শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। এই ক্যা¤েপর আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। উখিয়া ও টেকনাফের দুটি ক্যা¤েপ ৩২ হাজার রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হলেও ক্যা¤েপর ভেতরে এবং সংলগ্ন এলাকায় আরও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা তালিকা ছাড়াই অবস্থান করছে অবৈধভাবে। দুটি শরণার্থী ক্যা¤প ছাড়াও কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আরও প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য মতে, ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য মতে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। মাদক পাচারসহ চুরি-ডাকাতিতে জড়িত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। জেলখানায় স্থান সংকট হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কারণে। এরা ধরা পড়লেও স্থানীয় প্রশাসন পড়ে বিপাকে।
পাঠকের মতামত: